Priyo Projapoti | প্রিয় প্রজাপতি || Natok Story

 

Priyo Projapoti | প্রিয় প্রজাপতি

গল্প: অফিসের দিনলিপি — চরিত্র বিশ্লেষণসহ

মূল চরিত্রসমূহ

চরিত্রবৈশিষ্ট্য ও ভূমিকা
মুগ্ধ স্যারঅফিসের “লেট লতিফ”, হাস্যরসপ্রিয়, দায়িত্বশীল কিন্তু অনিয়মিত, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতায় সচেতন, কবিতাপ্রেমী, একটু লাজুক, সহকর্মীদের মাঝে জনপ্রিয়, নতুন প্রেমে বিভোর।
মিস প্রজাপতিসদ্য যোগ দেওয়া স্মার্ট, কর্মঠ, প্রাণবন্ত, দ্রুত কাজ করতে পছন্দ করেন, মুগ্ধের প্রতি আগ্রহী, পরিবার অস্ট্রেলিয়া পাঠাতে চায়, দ্বিধাগ্রস্ত কিন্তু সাহসী।
জসিমসহকর্মী, অফিসের প্রাণ, মজা করতে ভালোবাসেন, মুগ্ধকে খোঁচা দেন, সবার সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ।
বিগ বসঅফিসের কঠোর ও দায়িত্ববান প্রধান, নিয়ম-শৃঙ্খলা বজায় রাখতে চান, মুগ্ধকে সময়ানুবর্তিতার জন্য সতর্ক করেন।
নিতুঅফিসের আরও এক সহকর্মী, সহানুভূতিশীল, মুগ্ধ ও প্রজাপতির সম্পর্ক নিয়ে আগ্রহী।
আশরাফঅফিসের আরেক সদস্য, বনভোজনের দায়িত্ব পান, খাওয়া-দাওয়ায় এক্সপার্ট।

গল্পের বিস্তৃত বিবরণ

অধ্যায় ১: মুগ্ধ স্যারের সকাল

মুগ্ধ স্যার ক্যাপিটাল এফএম 94.8–এর অফিসের বিখ্যাত “লেট লতিফ”। সহকর্মীরা মজা করে বলেন, “মুগ্ধ সাহেব প্রতিদিন নিয়ম করে অনিয়ম করেন, আর আমরা সহ্য করতে করতে গন্ডারের মতো চামড়া হয়ে গেছি”। মুগ্ধের সকাল শুরু হয় দৌড়ে অফিসে আসা দিয়ে। তার ব্যাগে খেলোয়াড়দের মতো সবকিছু থাকে—টুথপেস্ট, ব্রাশ, সাবান, শ্যাম্পু, টাওয়েল, পারফিউম, আন্ডারওয়্যার। অফিসে এসে প্রথমেই ওয়াশরুমে গিয়ে ব্রাশ, গোসল, চুল শুকানো, পারফিউম লাগানো—সব শেষে আয়েশ করে কফি বানিয়ে ডেস্কে বসেন, যখন সহকর্মীরা অর্ধেক কাজ শেষ করে ফেলেছে।

অধ্যায় ২: বসের কাছে কৈফিয়ত

বিগ বস মুগ্ধকে ডেকে বলেন, “তুমি অফিসে লেট করে আসো কেন?” মুগ্ধ স্বীকার করেন, রাতে ঘুমাতে পারেন না, অফিসের কাজ বাসায় নিয়ে যেতে হয়, মাত্র তিন ঘণ্টা ঘুম হয়। বস হুঁশিয়ারি দেন, “আর দেরি করলে কোনো ওয়ার্নিং ছাড়াই ফায়ার করে দিবো”।

অধ্যায় ৩: মিস প্রজাপতির আগমন

পরদিন অফিসে যোগ দেন নতুন সদস্য, মিস প্রজাপতি। বাসে আসার পথে মুগ্ধ, ঘুমের ঘোরে মিস প্রজাপতির কাঁধে মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়েন। বিষয়টা নিয়ে অফিসে হাস্যরস শুরু হয়। মুগ্ধ লজ্জা পেয়ে সরি বলেন, প্রজাপতি হেসে বলেন, “ইচ্ছা করে করেননি, ঘুমের মধ্যে ছিলেন”। পরিচয়পর্বে মুগ্ধ বলেন, “আমি প্রজাপতি, প্রজাপতি, প্রজাপতি... বাটারফ্লাই।” এরপর অফিসে সবাই মিলে প্রজাপতিকে স্বাগত জানান।

অধ্যায় ৪: কাজের গতি ও ফেসবুক পোস্ট

অফিসে তুলনা চলে—মুগ্ধ কচ্ছপের মতো ধীর, প্রজাপতি খরগোশের মতো দ্রুত। মুগ্ধের ফেসবুক পোস্ট নিয়ে হাসাহাসি হয়:

“প্রিয় প্রজাপতি রংধনুর রঙের ডানায় উড়ে এলো, বলল গুড মর্নিং, কিন্তু আমার হাতে প্রজাপতি কেন? বিশ্বাস করুন, বিয়ে-শাদির কোনো প্ল্যান নেই।”

অধ্যায় ৫: বদলে যাওয়া আচরণ ও লাজুকতা

প্রজাপতির আগমনে মুগ্ধের আচরণ বদলে যায়। তিনি ডানদিকে তাকানো বন্ধ করেন, কারণ প্রজাপতি তার ডানপাশে বসেন। সহকর্মীরা খোঁচা দেন, “স্যার, কয়েকদিন ধরে দেখছি আপনি ডানদিকে তাকান না কেন?” মুগ্ধ বলেন, “ডাক্তারের নিষেধ”।

অধ্যায় ৬: অফিস গেম শো—‘কপাল পরীক্ষা’

অফিসে আয়োজন হয় গেম শো ‘কপাল পরীক্ষা’। সবাই নিজের ভাগ্য পরীক্ষা করেন। কেউ পান ইলিশ মাছ, কেউ মুলা। সদ্য ‘ফাস্ট লতিফ’ হওয়া মুগ্ধ পান একগুচ্ছ মুলা। সবাই হাসাহাসি করেন।

অধ্যায় ৭: কবিতার ভাষায় মনের কথা

দিন শেষে মুগ্ধ সাহস করে কবিতায় মনের কথা প্রকাশ করেন—

"তুমি আমার সামনে এলে হয়ে যাই কবি,
ভুলে যাই নিজের নাম, ঠিকানা, পদবি।
তুমি চোখের আড়ালে গেলে একে যায় ছবি।
আলো আশা ভালোবাসা তুমি তো সবই।
প্রজাপতি এনে দিতে পারি, তুমি কি পড়বে খোপায়?
রংধনু হয় আরো রংবাহারি, যদি তোমার দেখা পাই।"

প্রজাপতি জানতে চান, “আপনি কি আমাকে পছন্দ করেন?” মুগ্ধ অস্বীকার করেন, কিন্তু প্রজাপতি বলেন, “যদি আমি আপনাকে পছন্দ করি?”

অধ্যায় ৮: দ্বিধা ও সিদ্ধান্ত

অন্যদিকে, প্রজাপতির পরিবার চায় তিনি অস্ট্রেলিয়া চলে যান, কিন্তু তার মন পড়ে থাকে অফিসে, মুগ্ধের কাছে। সহকর্মীরা টিপ্পনী কাটে, “মুগ্ধ স্যারের গাড়ির বেয়ারিং ঠিক হয়ে গেছে, উনি ডানদিকে ফিরে প্রজাপতির দিকে তাকিয়েছেন”।

অধ্যায় ৯: বনভোজন ও সাহসী সিদ্ধান্ত

শেষে, অফিসে বনভোজনের ঘোষণা আসে। মুগ্ধ মনে মনে সিদ্ধান্ত নেন,

“আজ থেকে আমি টিপু সুলতানের মতো সাহসী, রোমিওর মতো রোমান্টিক। প্রজাপতিকে দেখে আর নার্ভাস হবো না, তাকিয়ে তাকিয়ে থাকবো।”


চরিত্র বিশ্লেষণ

মুগ্ধ স্যার:
অফিসের প্রাণ, হাস্যরসের কেন্দ্রবিন্দু, নিয়মিত দেরি করেন, কিন্তু কাজের প্রতি দায়বদ্ধ। ব্যক্তিত্বে মিশে আছে লাজুকতা, কবিতার প্রতি ভালোবাসা, এবং নতুন প্রেমের উন্মাদনা। সহকর্মীদের সাথে তার সম্পর্ক মজার, কিন্তু বসের কাছে তিনি প্রায়ই কৈফিয়ত দিতে বাধ্য হন।

মিস প্রজাপতি:
নতুন, কর্মঠ, স্মার্ট, দ্রুত কাজ করতে ভালোবাসেন। ব্যক্তিত্বে আত্মবিশ্বাসী, কিন্তু ব্যক্তিগত জীবনে দ্বিধাগ্রস্ত—অস্ট্রেলিয়া যাবেন নাকি অফিসে থেকে মুগ্ধর প্রতি আকর্ষণকে গুরুত্ব দেবেন, তা নিয়ে দ্বন্দ্বে থাকেন।

জসিম:
সবাইকে হাসাতে ভালোবাসেন, মুগ্ধকে খোঁচা দেন, অফিসের পরিবেশকে প্রাণবন্ত রাখেন।

বিগ বস:
কঠোর, নিয়মপ্রিয়, অফিসের শৃঙ্খলা বজায় রাখতে চান, মুগ্ধের দেরি ও আচরণ নিয়ে কঠোর অবস্থান নেন।

নিতু ও আশরাফ:
সহানুভূতিশীল, বন্ধুত্বপূর্ণ, অফিসের নানা আয়োজনে সক্রিয়, বনভোজনের দায়িত্বশীল।


উপসংহার

এই গল্পে অফিসের প্রতিটি চরিত্রের হাস্যরস, দ্বিধা, প্রেম, সাহস—সব মিলিয়ে এক অনবদ্য কর্মজীবনের চিত্র ফুটে ওঠে। মুগ্ধ ও প্রজাপতির সম্পর্কের টানাপোড়েন, সহকর্মীদের হাস্যরস, অফিসের নিয়ম-শৃঙ্খলা—সব মিলিয়ে গল্পটি হয়ে ওঠে প্রাণবন্ত ও বাস্তবধর্মী।

Share this post with friends

Previous Post Next Post
No one has commented on this post yet
Comments Here

Follow Top Trending Privacy Policy and comments

comment url